ছিনতাই চক্রের দৌরাত্ম্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি করছে?
শহরের ব্যস্ত সড়ক, অলিগলি কিংবা জনবহুল এলাকাগুলোতে ছিনতাই এখন এক নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও বড় শহরগুলোতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। পথচারীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, গয়না কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়া এখন যেন এক সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে? সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন রিপোর্টে উঠে এসেছে, ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো দিন দিন আরও সুসংগঠিত হচ্ছে। এখনকার ছিনতাইকারীরা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার জানে এবং তারা সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে কাজ করে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার কিংবা সিএনজি ব্যবহার করে তারা দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন চালিয়ে পালিয়ে যায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কিছু চক্র সক্রিয়, যারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের টার্গেট করে ছিনতাই চালাচ্ছে। সন্ধ্যা কিংবা রাতের বেলায় ছিনতাই বেশি হলেও, এখন দিনের আলোতেও এসব ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ব্যস্ত রাস্তা, মার্কেট এলাকা, ব্যাংকের আশপাশ, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড এবং ফ্লাইওভারের ওপর বা নিচে ছিনতাইকারীরা ওত পেতে থাকে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শুধু সাধারণ পথচারী নয়, অফিসগামী কর্মী, শিক্ষার্থী। পুলিশ ও র্যাব বিভিন্ন সময়ে ছিনতাই প্রতিরোধে অভিযান চালালেও, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ছিনতাই বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। পুলিশের টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সিসিটিভির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও তা নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে বা কার্যকর অবস্থায় থাকে না। এসব সমস্যা সমাধান করা দরকার।
পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নাগরিকদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত প্রশাসনকে জানাতে হবে। অনেক দেশেই ছিনতাই প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশেও এটি আরও বিস্তৃতভাবে কার্যকর করা যেতে পারে।
তাছাড়া, অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়াগুলো আরও দ্রুত ও কঠোর হতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে যায় এবং আবার অপরাধে লিপ্ত হয়। তাই দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ছিনতাই শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি সামগ্রিকভাবে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য হুমকি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে শহরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন ফিরিয়ে আনতে।
~সফিউল ইসলাম
No comments