রাইতুলদের পুরনো বাড়ি

 

 

বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলো, রাতুলেরা গ্রামে আসে না।কারন,তার বাবার পছন্দের বাড়িতে তার বাবার থাকার ঠাঁই হয়নি। অবশ্যই বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ের কাছে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন আসিফ সাহেব। কেন যেন রাতুল তার বাবা কে আজ বেশ দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তার কাছে কোন ছবি নেই। মায়ের কাছে শুনেছিলো, বাবা পরলোকগমন করার সময় বলে গিয়েছিলেন কখনো যদি আমাদের তাকে দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে তার পছন্দের বাড়িতে যাই। সেখান তাঁর বসবাস চির কাল না হলে ও তার ছবিটির মাধ্যমে সে চির কাল ঐ ঘরে বসবাস করতে চান। তাই মা কখনো ঐ ছবি টা দেয়াল থেকে সরাই নিই। আমি মা কে বললাম,মা চলো না এই ইট পাথর আর ধুলাবালির ছেড়ে আমরা গ্রাম থেকে বেড়িয়ে আসি। রাইতুল এর মা বেশ অবাক হয়ে বললো,কি হয়ে বাবা তোর? তুই তো কখনো গ্রামে যেতে চাসনি। যেতে বললেও,যাইতি না কখনো। এই ইট বালির শহরটাই তো তোদের আপন ছিলো। রাইতুল বললো,এত কিছু জানতে চাওয়ার দরকার নেই, রাইতুলের মা শরিফা খাতুন ছেলের হঠাৎ গ্রামে যাওয়ার কৌতুহল দেখে তাড়াতাড়ি করে কিছু জামা গুছিয়ে রেডি হয়ে গেলো। ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ তার মা বলে উঠলো খোকা শুননা, আমার যখন গ্রাম থেকে শহরে আসছিলাম ,তখন স্টেশনে তোর বাবা আর আমি দাঁড়িয়েছিলাম অনেকক্ষণ , পরোক্ষণে আমার খুব খিদে পেয়ে গেছিল,তোর বাবা খাবারের জন্য গিয়েছিলো, খাবার নিয়ে আসার সময় ফোনে টাকা ডুকাতে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখে পকেট এর একদিকে কাটা,টাকা গুলো নেই,পরে বা পাশে ভিতরের পকেটে কিছু টাকা থাকায় সমস্যা হয়নি, সাবধান থাকবি।এর ভিতরে ট্রেন চলে আসলো, তাঁরা ট্রেনে উঠে পড়লো, অনেকদিন পর রাতুলের ট্রেনে চড়া, কি আনন্দে না লাগছে রাতুলের মনে কাউকে বলে বুঝানোর মত না। খুব উৎফুল্ল মন নিয়ে দীর্ঘ ২ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে তারা পৌঁছালো তাদের শহরের স্টেশনে, স্টেশনে পৌঁছতে একটা হকার দেখতে পেল খুব চেনা চেনা লাগছে রাইতুলের, মাকে বলল ,দেখো না মা লোকটাকে কেন যে চেনা চেনা লাগছে না, মাকে নিয়ে লোকটার কাছে পৌঁছল, অনেকক্ষণ মা ছেলে লোকটাকে দেখছিল ভিড় থাকায়,লোকটিও তাদের কে খেয়াল করেনি, কিছুক্ষণ পর, লোকটির কথা তাদের দৃষ্টি সতেজ হলো,আরে আপামনি আপনারা ,কত দিন পর, বসানোর মতো তো জায়গায় নেই, রাইতুল বললো,মামা আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে, আপনার নাম যদি বলতেন,লোকটি বলল ভাগ্নে তোমার বাপ বাইচা থাকতে কত তোমাদের বাড়িতে যাইতাম, আমি রবিউল মামা তোমার, অতঃপর আজকে মতো সব গুছিয়ে রবিউল ও চললো তাদের সাথে, আধঘন্টা হাঠার পর ওরা উঠলো রবিউল এর বাড়িতে, রাইতুলদের বাড়ি থেকে খানিকটা আগে রবিউল এর বাড়ি, সেই দিন রাতে রবিউল এর সাথে বসে বসে বাবার স্বপ্নের আলোঘর নিয়ে ও স্মৃতি বিজড়িত কথা গুলো শুনলো রাইতুল,পর দিন সকালে ফজরের নামাজ পড়ে রবিউল এর সাথে পৌঁছেলো বাবার স্বপ্নের আলোঘর বাড়িতে, অনেক পুরনো তালা হওয়ায় ভাঙ্গতে হলো,ভিতরে প্রবেশ করে বাবার সেই পেলা রাখা ছবিটির খোঁজ করছে, অনেক গুলো রুম থাকায় বাবার ছবিটির সন্ধান পেতে কষ্টসাধ্য হলো রাইতুলের, তবে বেশ অবাক হলো ছবিটি পেয়ে, অনেক পুরনো ছবি, ঘর মেঝে সব খানে ধুলোর চড়ছড়ি, কিন্তু বাবার ছবিটাতে কোন ধুলো জমেনি,এই যেন কেউ সদ্য মুছে রেখেছে, রাইতুলের মনে অজন্তেই বলে ফেললো,তার বাবা ঠিক আগে মতোই রয়েছে ,যেমন টা তিনি পরিপাটি ছিলেন,এত বছর পর ও তার ছবিটি একদম পরিপাটি। কে করেছেন পরিপাটি? সেই বিষয়ে অনেক জানার কৌতুহল ছিলো,কিন্ত জানা হলো আজো তা আর।

লেখক: সফিউল ইসলাম



No comments

Powered by Blogger.